লামা প্রতিনিধি :: সড়ক প্রশস্তকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বান্দরবানে সড়কের দুপাশের বিভিন্ন প্রজাতির শত শত গাছ কাটা পড়ছে। ইতিমধ্যে পঞ্চাশ বছরের পুরনো মাদারট্রিসহ দুই শতাধিক বড়–ছোট গাছ ইলেকট্রিক করাত দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, সড়কের নিরাপত্তা ও সৌন্দর্য বর্ধনে লাগানো গাছগুলো কাটলেও গাছ রোপণ ও পরিচর্যাকারীদের এখনো দেয়া হয়নি লভ্যাংশের অর্থ।
জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলা সূয়ালক ইউনিয়নের মাঝের পাড়া, আমতলী পাড়া, তঞ্চঙ্গ্যা পাড়া এলাকায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) বান্দরবান–লামা সূয়ালক অভ্যন্তরীণ সড়ক প্রশস্তকরণের জন্য স্বল্প দামে নিলাম দেখিয়ে সুকৌশলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং সংশ্লিষ্টরা রাস্তার দুপাশের শত শত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ফেলেছেন।
বিনা প্রয়োজনেও অনেক গাছ কেটে ফেলছে শ্রমিকেরা। আগে যেখানে সবুজ ও ছায়ায় ঢাকা ছিল বর্তমানে সড়কটির দুপাশে কেবল কাটা গাছের গোড়া এবং সমিল ও ইট ভাটায় বিক্রির জন্য জড়ো করে রাখা গাছের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা যায়।
স্থানীয়রা জানায়, সড়কটিতে বেশকয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মীয় উপাসনালয় রয়েছে। গাছগুলো কেটে ফেলায় শিক্ষার্থী এবং পুণ্যার্থীরা চলাচলে গরমে কষ্ট পাচ্ছে। অথচ কদিন আগেও সড়কটির দুপাশের গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিয়েছে চলাচলকারীরা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটির দুপাশে হাজারের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে। সড়কটি প্রশস্তকরণ করা হলে দুপাশের অধিকাংশ গাছই কাটা হবে। তবে নিয়মবহির্ভূতভাবে নামমাত্র দামে ৩০৮টি গাছ কাটার নিলাম দেখানো হয়েছে। কিন্তু সবগুলো গাছই কাটা হবে। রাজস্ব এবং উপকারভোগীদের লভ্যাংশের অর্থ ফাঁকি দিতেই গাছের সংখ্যা কম দেখানো হয়েছে।
স্থানীয় উপকারভোগী জগতিশ তঞ্চঙ্গ্যা ও সুপ্রভা তঞ্চঙ্গ্যা অভিযোগ করে বলেন, সড়কটি প্রশস্তকরণের জন্য গাছগুলো কাটা হচ্ছে শুনেছি। তবে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের কথা বলেনি।
সড়কের জন্য জায়গা এবং সড়কের দুপাশের গাছগুলো আমরা গ্রামবাসীরা লাগিয়েছি, রক্ষণাবেক্ষণ করেছি। গাছগুলো থাকার কারণে সড়কে চলাচলকারী স্কুলের শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীরা গাছের ছায়ায় খানিকটা বিশ্রাম নিতে পারতো।
কিন্তু গাছগুলো কেটে ফেলায় রোদে কষ্ট পাচ্ছে মানুষ। সবগুলো গাছ না কেটে যেখানে প্রয়োজন শুধু সেগুলো কাটলে পরিবেশ কিছুটা হলেও রক্ষা হত।
স্থানীয় প্রফুল্ল পাড়া কার্বারি সুরেশ তঞ্চঙ্গ্যা অভিযোগ করে বলেন, নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিলামে বিক্রিত অর্থের ৩০% উপকারভোগী, ৩০% স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এবং ৪০% সড়কের মালিক এলজিইডির ফান্ডে জমা হওয়ার কথা।
কিন্তু উপকারভোগী সাধারণ পাহাড়িরা এখনও কোনো লভ্যাংশই পায়নি। গাছগুলো কাটার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো কথাও বলা হয়নি। বাধা দেয়া হলে গাছগুলো চেয়ারম্যান–মেম্বারের নির্দেশে কাটা হচ্ছে বলে জানিয়েছে শ্রমিকেরা।
সূয়ালক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান উক্যনু মারমা বলেন, নিয়ম মোতাবেক সড়কের উন্নয়নে রাস্তার দুপাশের গাছগুলো কাটার নিলাম দেয়া হয়। বিক্রিত অর্থও নিয়ম মত বণ্টন হবে। নিলামের বাইরে কোনো গাছ কাটা হবে না।
স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, সড়কটি ১৮ ফুটে প্রশস্তকরণের কাজ চলমান রয়েছে। রাস্তাটি উভয় পাশে তিনফুট করে বাড়ানোর কারণে সবগুলো গাছই কাটা পড়ত। কিন্তু তারা সংখ্যা কমিয়ে ৩০৮টি গাছ কাটার পরামর্শ দিয়েছেন। গাছ কাটলেও সড়কটি নির্মাণের পর বান্দরবান থেকে লামা উপজেলা পর্যন্ত দুপাশে দশ হাজার কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, চম্পা ও জারুল ফুলের গাছ লাগানো হবে।
বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মুর্শেদ বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশলের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৩০৮টি গাছ পরিমাপ ও মার্জিন করে দেয় বনবিভাগ। কিন্তু নিলাম প্রক্রিয়ার সঙ্গে বনবিভাগ সম্পৃক্ত নয়।
পাঠকের মতামত: